শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:১০ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর ব্যুরো :
@ দাফতরিক নানা কাজে সমস্যার সৃষ্টি
রংপুরের ৫৪৮ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে নেই প্রধান শিক্ষক। ভারপ্রাপ্ত দিয়েই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে শ্রেণী কক্ষে পাঠদান। শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের দাফতরিক নানা কাজে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিষয়টি লিখিতভাবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে জানানো হলেও নেয়া হয়নি কোন উদ্যাগ। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেছেন, গত ১৩ বছর ধরে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ কিংবা পদোন্নতি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে বহুবার লিখিতভাবে জানানোর পরও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এতে চরম ভোগান্তি হয়। সেই সাথে পাঠদান ব্যহত হয়। নানান সমস্যায় পড়তেও হচ্ছে। রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক হাজার ৪৫৫টি। এর মধ্যে ২৪৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। পাশাপাশি ৩০২টি বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষকরা। এর মধ্যে কাউনিয়া উপজেলার ২৪টি, গংগাচড়ার ১৯টি, তারাগঞ্জের ৪১টি, পীরগঞ্জের ১৩টি, পীরগাছার ৩৫টি, বদরগঞ্জের ৩৩টি, মিঠাপুকুরের ৫৩টি এবং সদর উপজেলার ২৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৩ বছর ধরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। তার ওপর প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক অবসরে যাচ্ছেন। অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। সেসব শূন্য পদ পূরণের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ক্ষোভের সঙ্গে জানান, দাফতরিক কাজ করতে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের নানা ধরনের শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত পাঠদান করাতে পারছেন না। সেইসঙ্গে একজন প্রধান শিক্ষক যেভাবে দক্ষতার সঙ্গে বিদ্যালয়ের দাফতরিক কাজগুলো করবেন, তা একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পক্ষে করা সম্ভব হয়ে উঠে না। আবার প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য মানে বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক নেই। এ অবস্থায় পাঠদান ব্যাহত হওয়া স্বাভাবিক। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোন উদ্যাগ নেয়া হচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাউনিয়া উপজেলার দুজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষকের পদ ফাঁকা মানে একজন শিক্ষক নেই। এতে শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে পাঠদান করানো যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে অন্য শিক্ষকদের ওপর চাপ পড়ে। ক্লাস বেশি নিতে হয়। পাশাপাশি দাফতরিক কাজে ব্যাঘাত ঘটে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দাফতরিক কাজে জেলা শহরে গেলে বিদ্যালয়ে দুজন শিক্ষক থাকেন। তখন তাদের হিমশিম খেতে হয়।
এ ব্যাপারে রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ এম শাহজাহান সিদ্দিক বলছেন, বিগত ‘২০০৯ সালের পর থেকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ ও পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে। এর মাঝে ১৩ বছর চলে গেছে। এই সময়ে নতুন করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ কিংবা পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় জেলার তিন শতাধিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের বিষয়েও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এতে বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
তিনি আরোও জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে রংপুর জেলার সম্ভাব্য প্রধান শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করে পাঠানো হয়েছে। তবে অধিদপ্তর থেকে কোন সিদ্ধান আসেনি। তার পরেও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।